প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। দেশবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাই এই অগ্রযাত্রা রুখে দিতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। মিথ্যা-বানোয়াট-কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিদেশে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, কেউ যাতে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে আমাদের সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’– জাতির পিতা প্রণীত বৈদেশিক নীতির এই মূলমন্ত্রকে পাথেয় করে বর্তমান সরকার বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দৃষ্টিতে, ‘জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে এই মুহূর্তে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে তাঁদের কষ্ট লাঘবে ভাসানচরে ১ লাখ মানুষের বসবাস উপযোগী উন্নতমানের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনির্মাণই হচ্ছে আমাদের বর্তমান এবং আগামী দিনের সব কার্যক্রমের লক্ষ্য। অফুরন্ত জীবনীশক্তিতে বলীয়ান তরুণ প্রজন্মই পারে সব কূপমণ্ডূকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারুণ্যের শক্তিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম মাথা উঁচু করে ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে যাবে।’
শেখ হাসিনার কথায়, ‘আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রতিহত করেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তবে এই ব্যাধি দূর করতে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।’
গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানান আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের ওপর আস্থা রাখার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। জনগণই ক্ষমতার উৎস। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। তাই জনগণের সঙ্গেই আমাদের অবস্থান। পর পর তিনবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিয়ে আপনারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছেন। এর মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, যাতে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাতারে শামিল হতে পারে। এজন্য অতীতে যেমন আপনারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে থাকবেন, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে ২৪ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। একইসঙ্গে উদযাপন করেছি মুজিববর্ষ। দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নতুন করে দেশ গড়ার শপথ নিয়েছেন।’