মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত দশম লিবারেশন ডক ফেস্টে সেরা ছবি হিসেবে ইয়ুথ জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ফুয়াদ চৌধুরী নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘গণফাঁসি ৭৭’।
গত ১৫ মার্চ এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় সামরিক বাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারে সেনা ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্যকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১৯৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু ওই ঘটনার জেরে মৃতের সংখ্যা যেমন অনেক বেশি ছিল, তেমনি কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন অনেকেই। সেইসব রাতের নির্বিচার হত্যার লোমহর্ষক ইতিহাস নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘গণফাঁসি ৭৭’।
এর নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘১০-১১ বছর আগে কানাডায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মিনিস্ট্রি সেক্রেটারি প্রথম আমাকে গণফাঁসি সম্পর্কে বলেন। ১৯৭৭ সালে যারা সিপাহি বিদ্রোহ করেছিলেন, তাদের বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচার করা হয়। সেই ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে কমিশন নন-কমিশন অফিসাররা ছিলেন; যারা বিচার করেন এবং দ্রুত রায় দেন। জিয়াউর রহমানের মিনিস্ট্রি সেক্রেটারি আরও বলেন, প্রতিদিন জিয়াউর রহমানের কাছে ফাঁসির অর্ডার নিয়ে গেলে তিনি সেখানে স্বাক্ষর করে দিতেন। প্রতি বছর ঢাকার প্রেস ক্লাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের পরিবার মিলিত হয়।
গত বছর প্রেস ক্লাবে এমন কয়েকজনের পরিবারের সঙ্গে দেখা হলে এ বিষয়ে তারা আরও অনেক তথ্য দেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, আমাদের বাবা-চাচাকে কেন, কোন অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়, তা আমরা জানতে পারিনি। এমনকি তাদের কোথায় ও কবে ফাঁসি হয়, সেটাও জানা যায়নি। ফাঁসি দেওয়ার পর আমরা সরকারি চিঠি পাই এবং তাদের কাপড়ের ব্যাগ জেলখানা থেকে ফেরত দেওয়া হয়। ঢাকায় আজিমপুরে ১২১টি কবর পাওয়া যায়, যার কোনো পরিচয় নেই। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানতে চাইলেন গণমাধ্যম এ বিষয়টা নিয়ে কিছু করবে কিনা। এই কারণেই ‘গণফাঁসি ৭৭’ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন বলে জানিয়েছে এর নির্মাতা।