কক্সবাজারে সাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে বড় বড় ইলিশ। ট্রলার ভর্তি এসব ইলিশ নিয়ে ঘাটে বিক্রি করতে আসলেই শুরু হয় কাড়াকাড়ি। তর্কাতর্কি করে যার কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন তাকেই ইলিশ দিয়ে দিচ্ছেন জেলেরা। জেলেরা বলছেন, ইলিশ আকারে বড় হওয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি করতে পেরে দারুণ খুশি তারা। তবে সরকারি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সুফল মিলছে বলে দাবি করেন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল খেকেই বাঁকখালী নদীর তীরে সারি সারি ট্রলার। এসব ট্রলার জেটিতে ভিড়তে অপেক্ষা করছেন, কখন ইলিশ ঘাটে নামাবেন। কিন্তু একটি জেটি হওয়ায় অনেক ট্রলার ছোট নৌকায় করে ইলিশ নামিয়ে তা ঘাটে নিয়ে আসছে। এরপরই ইলিশ নিয়ে শুরু হয় কাড়াকাড়ি। দাম নিয়ে চলে তর্কাতর্কি কিংবা হাঁকডাক। এরপর দাম নির্ধারণ হতেই ঝুঁড়িতে গুনে গুনে ভরা হয় ইলিশ। আর তা দ্রুত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুনে।
এ বিষয়ে মাঝি নুরুল আমিন বলেন, অনেক বড় বড় ইলিশ। একেকটির ওজন দেড় কেজির বেশি হবে। অনেক আনন্দ লাগছে এবছর। আমরা সাগরে মাছ ধরে আনন্দ পাচ্ছি, আবার ঘাটে এনে বিক্রি করেও আনন্দ পাচ্ছি।
ফিরোজ আলম বলেন, এখন সাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ। তাও আবার বড় বড় ইলিশ। সাগরে জাল ফেলে ১ হাজার বা ২ হাজার ইলিশ পেলেই তা দ্রুত বিক্রির জন্য ঘাটে চলে আসছি। কারণ ইলিশের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ইলিশের আকার অনেক বড়। বড় আকারের এক’শ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। আর মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। বেলা ১১টা না বাজতেই কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ৩টি পল্টুন ইলিশে সয়লাব। পল্টুনে ইলিশ রাখার স্থান না পেয়ে রাখা হচ্ছে খোলা মাঠে। এসব ইলিশ ওজন করে দ্রুত বরফ দিয়ে করা হচ্ছে প্যাকেটজাত। যা দ্রুত সরবরাহ করা হচ্ছে সারাদেশে।
মৎস্য ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, সরকারি ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে আরও এক মাস মাছ শিকারে যেতে পারেনি জেলেরা। যার কারণে আমরা যারা মৎস্য ব্যবসায়ী ছিলাম সবাইকে লোকসান গুনতে হয়েছে। কিন্তু এখন নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছি, সাগরে বড় আকারে ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। যার কারণে ইলিশের চাহিদা বেড়েছে আর আমাদের আয়ও বেড়েছে। এখন আমরা লাভের মুখ দেখছি।
ব্যবসায়ী আবু বলেন, প্রতিদিনই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পল্টুন ইলিশে ভরে যাচ্ছে। এসব ইলিশ দ্রুত কিনে আমরা সারাদেশে সরবরাহ করছি। তবে যদি ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অজর্ন করা সম্ভব হতো।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের হিসাব নিয়ন্ত্রক আশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, ইলিশ আকারে বড় হওয়ায় লাভবান হচ্ছে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। গেলো ১৫ দিনের কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সরবরাহ হয়েছে ৬৬০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ। যার মধ্যে ইলিশ রয়েছে ৩৩৪ মেট্রিক টন।