গাজীপুর সিটি করপোরেশন কালা শিকদার ঘাট এলাকায় নির্মাণ করা সেতুতে তিন বছরেও সংযোগ সড়ক বানানো হয়নি। স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে বাঁশ-কাঠ দিয়ে বানানো মই দিয়ে সেতুতে ওঠেন। খবরের কাগজ
গাজীপুর নগরের কালা শিকদার ঘাট এলাকায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তিন বছর আগে পুরোনো ব্রিজ ভেঙে নির্মাণ করা হয় নতুন সেতু। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় এই সেতু এখন কোনো কাজেই আসছে না। উল্টো, পুরোনো সেতু দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে হেঁটে পারাপারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাঁশ থেকে পা পিছলে পড়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সংকট থেকে উত্তরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনদুর্ভোগ লাঘবে চিলাই নদীর ওপর এ সেতুটি নির্মাণ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। সেতুর দক্ষিণ পাশে গাজীপুর জেলা শহরের অফিস আদালত, উত্তরে ২৫নং ওয়ার্ড ভুরুলিয়াসহ একাধিক গ্রাম। পশ্চিমে ৩০ ফুট গভীর খাল ও কৃষিজমি। পূর্ব পাশেও খাল ও কৃষিজমি। দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয়দের সাঁকো বেয়ে সেতুর ওপরে উঠে চলাচল করতে হয়।
ভুরুলিয়া এলাকার রনজন দত্ত (৭৫) বলেন, ‘শেষ বয়সে এসে গত তিন বছর ধরে কী পরিমাণ কষ্ট করতে হচ্ছে তা বলে বোঝানো সম্ভব না। কারও কাছে অভিযোগ দিয়েও সমাধান মিলছে না। প্রতিদিন ভুরুলিয়া গ্রাম থেকে সদরে যেতে হয়। আসা-যাওয়ার সময় এই ব্রিজটিতে উঠলেই মনের মধ্যে ভয় কাজ করে। চলতি মাসে এই ব্রিজ পার হতে গিয়ে আমার একটি হাত ভেঙে গেছে।’
গাজীপুর সদরের টাংকিরপার এলাকার কবির হোসেন বলেন, ‘সেতুটি তড়িঘড়ি করে বানানো হয়েছে। হঠাৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে চলে যায়। গত তিন বছর ধরে স্থানীয়রা নিজস্ব উদ্যোগে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে কোনো রকম চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিদিনই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে।’
স্থানীয় দোকানি সেলিম খান বলেন, ‘আগেই ভালো ছিল। ব্রিজ ভাঙা থাকলেও গাড়ি চলাচল করতো। এখন সব বন্ধ। এই ব্রিজের কারণে আমার দোকানের বেচাকেনা কমে গেছে। গাজীপুর জেলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের সেতুর দরকার ছিল, তাই সরকার সেতু দিয়েছে। কিন্তু সেতু হওয়ার পরও আমাদের বাঁশ কাঠ দিয়ে পারাপার হতে হয়। এখানে বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল পারাপার করা যায় না।’
অটোরিকশা চালক আব্দুস সালাম বলেন, ‘এখান থেকে আদালতে, ডিসি অফিসে যেতে মাত্র তিন মিনিট সময় লাগে। দূর থেকে মানুষ হেঁটে আসে। এখান থেকে রিকশায় ওঠে। শুনেছি, সেতু পারাপারে তিনজন কাঠের মাচা থেকে পা পিছলে পড়ে গেছে। হাত পা ভাঙার ঘটনাও আছে।’
গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট রমিজ উদ্দিন বলেন, নিজ গ্রাম থেকে প্রতিদিন দুবার করে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হয়। অনেক কষ্ট করে ব্রিজ দিয়ে পার হতে হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় কষ্ট বাড়ে। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে কষ্ট করছি। এই সেতু দিয়ে অনেক মানুষ যাতায়াত করে। দেখারও কেউ নেই। কিছুদিন আগে একবার উদ্যোগ নিয়ে আর সংযোগ দেয়নি। এই সেতুর দুপাশে সংযোগ খুবই জরুরি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবুর রহমান বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণ হলেও দুই পাশে সংযোগ দিচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়িমসি করছে। এতে এলাকাবাসী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। সামনে বর্ষাকাল আসছে, তখন দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বাড়বে। তাই দ্রুত সংযোগ সড়ক স্থাপন করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শামসুর রহমান মাহমুদ বলেন, ২০২০-২২ অর্থবছরের সিটি করপোরেশনের বিশেষ বরাদ্দে সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। তিনি বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজ শেষ হচ্ছে না। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক দেওয়া হয়নি। দ্রুত কাজ শেষ করে সড়কের সংযোগ দিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।