লক্ষন বর্মন, নরসিংদী প্রতিদিন : দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য। কালের পরিক্রমায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল আর নালা। আগের মতো আষাঢ়-শ্রাবণ এলেও নৌকায় পাল তুলে মাঝিদের গান ধরতে দেখা যায় না। শত প্রতিকূলতার মাঝেও কেউ কেউ বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নানা বয়সের কয়েকশ মানুষ পলো নিয়ে এই উৎসবে অংশ নেয়। এদের প্রায় সব বয়সের মানুষ বিভিন্ন মাছ ধরে সীমাহীন আনন্দে ভেসেছে। শত বছরের ঐহিত্যবাহী মাছ ধরার এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে নদী রক্ষার দাবী মাছ শিকারীদের।
নরসিংদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী-নালা খাল-বিলের পানি এরই মধ্যে শুকিয়ে এসেছে। আর সেসব শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারিদের পলো বাওয়া উৎসব। সময়টা এলেই বিভিন্ন এলাকা শিকারিরা ঐক্যবদ্ধভাবে দল বেঁধে উৎসব মুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেয়।
পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্টই হলো দল বেঁধে পলো নিয়ে (বাঁশ দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি ঝাঁপি) মাছ ধরা। আর এই উৎসবকে ঘিরে সৌখিন মাছ শিকারীরা গড়ে তুলেন পলিয়া নামে একটি মৎস্য শিকারী সমিতি। ব্যাপক প্রস্তুতি না থাকলেও সমিতির শৌখিন মাছ শিকারিরা নিজেদের আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনণ নির্ধারণের পর সবাইকে জানিয়ে দেন।
এ ঘোষণার পর আগ্রহী শৌখিন মাছ শিকারিরা বাঁশের তৈরি পলো নিয়ে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেয়। পর্যায়ক্রমে একেক নদীতে বা জলাশয়ে একেক দিন এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার নরসিংদীর বদরপুর গ্রামে মেঘনার শাখা পাগলা নদীতে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে সদর উপজেলা সহ রায়পুরা, শিবপুর সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন বয়সের কয়েকশ শৌখিন মাছশিকারি পলো নিয়ে এই উৎসবে অংশ নেয়।
সকাল ১১টায় নদীর জামতলা ঘাট থেকে মাছ শিকার শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত চলে মাছ শিকার। পলো বাওয়া উৎসবে একজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও আনন্দে মেতে ওঠে। উৎসবে শৈল, গজার, বোয়াল, আইর, কালনা ও টাকিসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন ভিড় জমায় নদী ঘাটে।
মাছ প্রেমিক শিকারিরা আব্দুল রহমান পরির্বতনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী-নালা ও খাল-বিলের তলদেশ ভরাট হয়ে প্রতিনিয়ত পানি হ্রাস পাচ্ছে। এবং নদী দূষণসহ নানামুখী তৎপরতার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ত্রেগুলোর বেশির ভাগই বিনষ্ট হয়ে গেছে। নদী বেঁচে থাকলে বেঁচে থাকবে ঐতিহ্যবাহী এই পলো উৎসব। তাই পলো বাওয়া উৎসব থেকেই নদী রার দাবি জানানো হয়।
সৌখিন মাছ শিকারি রফিকুল ইসলাম বলেন, দিন দিন হারিয়ে যাওয়া বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতেই যেন ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন হয়।
অপর শিকারী আসাদ আলী অভিযোগ কওে পরির্বতনকে বলেন, নদীতে এখন আর তেমন মাছ পাওয়া যায়না। ড্রাইং,ফ্যাক্টরীর রং মিশ্রিত বিসাক্ত পানি নদীতে ছাড়ায় নদীর মাছ কমে যাচ্ছে। তাই নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে কলকারখানার বিসাক্ত বর্জ্য না ফেলার দাবী জানিয়েছেন। একই সাথে পলো বাওয়া উৎসব থেকে নদী রক্ষার দাবী জানানো হয়েছে।
তবে দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে নদীমাতৃক দেশের প্রতিটি স্থানে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।