নরসিংদী প্রতিদিন: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নরসিংদীর দুই প্রবাসী আমির হোসেন ও ইদেন মিয়ার পরিবারে এখন শোকের মাতম। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন দিশেহারা।
গত শনিবার (৬ জানুয়ারি) সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিজান প্রদেশে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সকাল ৭টায় ২০ জন বাংলাদেশী শ্রমিক একটি ট্রাকে করে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে পেছন থেকে আসা আরেকটি গাড়ি ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এই নিহতদের মধ্যেই ছিলেন নরসিংদীর আমির হোসেন ও ইদেন মিয়া।
তাদের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে আছেন স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা। অভাবের সংসারে ঋণগ্রস্ত দুই পরিবারে অবুঝ সন্তানদের নিয়ে কী করবেন ভাবতে পারছেন না তারা। শেষবারের মতো বাবার মৃতদেহ দেখতে দ্রুত তাদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি সন্তানদের। এই নিঃস্ব পরিবার দুটির জন্য সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরাও।
নরসিংদী সদর উপজেলার বাউশিয়া গ্রামের আমির হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের প্রিয়জনদের হারানোর খবর শোনার পর থেকেই শোকের ছায়া নেমে আসে সমস্ত এলাকায়। এই হৃদয় বিদারক সংবাদ শুনে নিহতদের বাড়িতে ভিড় জমায় গ্রামবাসী। শোকে অনেকটা নির্বাক হয়ে আছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমির হোসেনকে হারিয়ে তাঁর পরিবার এখন দিশেহারা। শেষবারের মতো বাবার প্রিয়মুখটি দেখতে চান অবুঝ সন্তানরা। সরকারের মাধ্যমে দ্রুত মৃতদেহ ফিরে পেতে দাবি তাদের।
নিহত আমির হোসেনের স্ত্রী শাহেনা আক্তার বলেন, ‘দুই বছর আগে শেষবারের মতো ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। আগামী মাসে আবারও ছুটিতে আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন সারাজীবনের জন্য ছুটি নিয়ে নিলো। ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন আমি কীভাবে দিন কাটাবো?’
নিহত আমির হোসেনের ছেলে রবি উল্লাহ শেষবারের মতো বাবাকে দেখতে চায়। বাবার মৃতদেহটা দেশে আনার দাবি তার।
নিহতের বড় ভাই মনির হোসেন বলেন, ‘আমার ছোট ভাইটা অনেক সহজ সরল প্রকৃতির ছিল। সম্প্রতি তার দেশে ছুটিতে আসার কথা ছিল। এরই মধ্যে আমরা তার মৃত্যুর খবর পাই। এখন আমাদের দাবি দ্রুত তার মৃতদেহটা আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। আর সরকারের কাছে দাবি তার পরিবারের পাশে যেন দাঁড়ায়।’
অপর প্রবাসী আলোকবালী ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের ইদেন মিয়ার বাড়িতেও দেখা গেল শোকের মাতম। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ইদেন মিয়া ধার দেনা করে সুখের আশায় দেড় বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। বিদেশে যাওয়ার সময় ঋণের টাকা এখনও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে শুনতে হল এই হৃদয় বিদারক মৃত্যুর সংবাদ। অভাবের সংসারে অবুঝ ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাকী জীবন কীভাবে কাটাবে এই নিয়ে দিশেহারা তার পরিবার।
নিহত ইদেন মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, ‘সুখের আশায় দেশের কৃষি কাজ ছেড়ে দিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। এসময় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ঋণ করা হয়। ঋণের ৫ লাখ টাকা এখনও বাকি রয়ে গেছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন কী করি ভেবে কোনো উপায় পাচ্ছি না।’
৫ম শ্রেণী পড়ুয়া বড় মেয়ে জোহরার আকুতি, ‘শেষবারের মতো বাবার মুখ দেখতে চাই।’