নরসিংদী জেলার রায়পুরার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিড়পুর মধ্যপাড়া গ্রামে বাড়ি বাড়ি চলছে রাত দিন চাঁই তৈরির কাজ। তাদের বাব-দাদার ঐতিহ্যকে লালন করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সন্তানদেন স্বপ্ন লুকিয়ে আছে চাঁই বানানোর পেশায়।
এই বর্ষার মৌসুমে নিচু গ্রামাঞ্চলে জোয়ারে থৈ থৈ করা জলাসয়ে নানান সরঞ্জাম দিয়ে মাছ মারতে ব্যস্ত হয়ে উঠে জেলে সহ স্থানীয়রা। এর মাঝে বাংলাদেশে মাছধরার চিরায়ত প্রধান পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সহজ পদ্ধতি চাঁই। গ্রামাঞ্চলে এখন নদী-নালা খাল-বীলে দেশীয় মাছের আনাগুনা। মাছ শিকারের জন্য তৈরি হচ্ছে চাঁই। মুলি ও মোড়ল দুই ধরনের বাঁশ দিয়েই এ চাঁই তৈরি করা হয়। মূলত এ শিল্পের বেশির ভাগ কারিগরই হলেন নারী। একটি মুলি বাঁশ দিয়ে সাধারণত ছোট মাছ ধরার চারটি চাঁই হয়, কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। প্রথমে বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা তুলে সেগুলো রোদে শুকানো শেষে শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ।
কাজের লোক ব্যতিত পরিবারের নারী পুরুষ বৃদ্ধসহ শিশুরাও এ কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধাপে একটি পরিপূর্ণ চাঁই তৈরি হয়। পানিতে মাছ চলাচল করতে করতে একসময় চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। খাল- বিলে ডুবে যাওয়া ফসলি ক্ষেতে পেতে রাখা হয়। যেখান থেকে দেশীয় প্রজাতির চিংড়ি, শোল, শিং, কই, খইলসা, পুঁটিসহ দেশিয় মাছ ধরতে পারি।
বর্ষাকালে দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বাঁশের চাঁই দিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা যায়, যা স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রির জন্য ওঠানো হয়। এসব হাট থেকে যেমন খুচরা ক্রেতারা চাঁই কেনেন, তেমনি আবার পাইকাররা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির করে।
চাঁই বোনচা নূরুল ইসলাম বলেন, জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত চারমাস এর বিক্রি বেশি হয়। কাঁচামালের (বাঁশ) দর বেড়ে যাওয়ায় এখন চাঁইয়ের দরটাও অনেক বেশি। মো রিপন মিয়া সাথে কথা বলে জানাযায়, মাছ ধরার ফাঁদ (চাঁই) তৈরিতে বাঁশ আর সুতা ব্যবহার করা হয়। তবে বাঁশের সংকটের কারণে দিনে দিনে এসব মাছ ধরার ফাঁদের দর বাড়ছে। বর্তমান বাজারে আকার ও আকৃতি ভেদে এসব ফাঁদ দু’শত থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে।
চাঁই বোনচা সাগর,ফারুক মিয়া, মনির, সুমনমিয়া, সাদ্দাম মিয়া জানান, এই গ্ররামে ১০ থেকে ১২ টি পরিবার জীবিকা নির্বাহের একটি মাত্র ভরসা। এতে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাব দাদার ঐতিহ্য হিসাবে শিখে কর্ম করে চলতেছি। আইয়ের উৎস এটাই। পুঁজির অভাবে কিছুটা সমস্যা হলেও চালিয়ে যাচ্ছি। বয়োবৃদ্ধসহ শিশুরাও মাঝে মধ্যে এ কাজে সহায়তা করে যাচ্ছে। ঘরের মেজে, বারান্দয়, উঠোনে কাজ করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন অংশ তৈরি করা হয়। যা আলাদা আলাদা তৈরিতে ১৫ থেকে ২৫ টাকা করে চুক্তিতে অনেকে কাজ করে থাকে। এক সাথে জরো করলেই হয়ে যায় চাঁই। সপ্তাহে প্রতিটি পরিবার থেকে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টি তৈরি করতে পারি। সরকারি কোনো পৃষ্ঠপুসকতা পেলে এই শিল্পকে ঠিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাঁশ দুই থেকে তি’শত টাকা দিয়ে কিনে দশটা চাঁই বানাানো যায়। পাইকার বাড়িতে এসে প্রতিটা দু’শত টাকা দরে কিনে যায়।
পাইকারি ক্রেতা জয়নাল মিয়া বলেন,তারা তৈরি করে ফোন দিলেই চলে আসি। এই গ্রামে সপ্তাহ পর পর এসে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে থাকি।
মাছ শিকারী জলিল মিয়া বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে চাঁই আগে যেমন জনপ্রিয় ছিল,এখনও রয়েছে।