স্পোর্টস ডেস্ক | নরসিংদী প্রতিদিন-
বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯:
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার সৌম্য সরকারের সঙ্গে মুশফিকের উইকেট উদযাপন ডেভিড ওয়ার্নারের শুরুটা ছিল মন্থর। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে খেলেছেন ঝলমলে এক ইনিংস। তার ১৬৬ রানের সঙ্গে উসমান খাজা ও অ্যারন ফিঞ্চের হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে রানের পাহাড় গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে তাদের রান ৩৮১।
অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের শেষ ওভারে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আপাতত খেলা তাই বন্ধ। তার আগেই বিশাল সংগ্রহ গড়ে রেখেছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। বৃষ্টির বাধাতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ব্যাট করছিলেন মার্কাস স্টোইনিস (৬*) ও অ্যালেক্স ক্যারি (৯*)।
২ রানের মধ্যে ৩ উইকটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া! গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও উসমান খাজার পর প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন স্টিভেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
স্মিথ কিছুই করতে পারেননি। মাত্র ১ রান করে এলবিডাব্লিউয়ের শিকার তিনি। মোস্তাফিজের লাইনে থাকা বল তার প্যাডে আঘাত করলে ফিল্ড আম্পায়ার আউটের সংকেত দেন। স্মিথ রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি।
ট্রেন্টব্রিজে চলছে সৌম্য সরকারের জাদু। ব্যাটিং নয়, বোলিংয়ে পাচ্ছেন তিনি একের পর এক সাফল্য। অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরানোর পর এবার তার শিকার উসমান খাজা। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও রান আউট হয়েছেন তার ওভারেই।
বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। সৌম্যর ওভারেই রান আউট হয়ে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান। রুবেল হোসেনের চমৎকার থ্রোতে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে মাত্র ১০ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় খেলে যান ৩২ রানের টর্নেডো ইনিংস।
তার আউটের পর আবারও সৌম্যর জাদু। এবার তার শিকার হয়ে ফেরেন উসমান খাজা। সেঞ্চুরির আশা জাগানো এই ব্যাটসম্যান ৮৯ রানে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৭২ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ১০ বাউন্ডারিতে। তাকে আউট করে সৌম্য পান তৃতীয় উইকেট।
বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। অবশেষে তাকে থামানো গেল। সেই সৌম্য সরকারের বলেই বাংলাদেশ পেয়েছে দ্বিতীয় সাফল্য। অ্যারন ফিঞ্চের উইকেটটিও ছিল সৌম্যর শিকার।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি পূরণের পর ১৫০ রানও ছাড়িয়ে যান ওয়ার্নার। বাংলাদেশের নিয়মিত বোলারদের ওপর ঝড় তুলে একের পর এক বল করেছেন সীমানা ছাড়া। অবশেষে তাকে থামালেন ‘পার্ট-টাইম’ বোলার সৌম্য। তার শর্ট বল থার্ডম্যানের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে আশ্রয় নেয় রুবেল হোসেনের হাতে।
আউট হওয়ার আগে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১৪৭ বলে ১৪ চার ও ৫ ছক্কায় খেলে যান ১৬৬ রান।
থামানো যাচ্ছে না ডেভিড ওয়ার্নারকে। তার সঙ্গে জ্বলে উঠেছেন উসমান খাজাও। এই দুই ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বিশাল সংগ্রহের পথে অস্ট্রেলিয়া।
শুধুমাত্র অ্যারন ফিঞ্চের উইকেটটি হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমত শাসন করে যাচ্ছেন ওয়ার্নার। সেঞ্চুরি পূরণ করা এই ব্যাটসম্যানের রান দেড় শ ছাড়িয়েছে। তার সঙ্গে খাজাও আছেন ছন্দে। হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে সেঞ্চুরির পথে আছেন তিনিও। যাতে অস্ট্রেলিয়ার রান ৪৩.৩ ওভারেই ছাড়িয়েছে ৩০০।
আবারও সেঞ্চুরি পেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের পর বাংলাদেশের বিপক্ষেও শতক তুলে নিলেন তিনি। সাকিব আল হাসানের বলে ১ রান নিয়ে ওয়ার্নার পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি। ১১০ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় এই মাইলফলকে পৌঁছান অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।
নিয়মিত বোলারদের দিয়ে যখন সাফল্য আসছিল না, ঠিক তখনই মাশরাফি বোলিংয়ে আনলেন ‘পার্ট-টাইম’ বোলার সৌম্য সরকারকে। এই মিডিয়াম পেসার বোলিংয়ে এসেই পেলেন সাফল্য। নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই অ্যারন ফিঞ্চকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙলেন সৌম্য।
সৌম্যর লাফিয়ে ওঠা বল ফিঞ্চের ব্যাট লেগে ধরা পড়ে শর্ট থার্ডম্যানে থাকা রুবেলের হোসেনের হাতে। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখা ফিঞ্চের ইনিংসটা থামে ফিফটি পূরণের পরপরই। ৫১ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৩ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। তাতে সৌম্যর হাত ধরে প্রথম উইকেট পায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধের পর আবার জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এবার অস্ট্রেলিয়াকেও হারানোর আত্মবিশ্বাস মাশরাফিদের মনে। বৃহস্পতিবার ট্রেন্টব্রিজে এই বিশ্বাস নিয়ে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ।
ইনজুরির কারণে বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন এনেছে। কাঁধের চোটে নেই মোসাদ্দেক হোসেন, পিঠের সমস্যায় বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তাদের জায়গায় দলে ঢুকেছেন সাব্বির রহমান ও রুবেল হোসেন।
ট্রেন্টব্রিজে সুখস্মৃতি নেই বাংলাদেশের। সবশেষ ২০১০ সালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখানে খেলেছিল তারা। আগেরটি আরও আগে, ২০০৫ সালে। অতীত ভুলে রবিন হুডের শহরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নতুন ইতহাস গড়ার মিশনে নেমেছে মাশরাফিরা।
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি মুর্তজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাব্বির রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ: অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, উসমান খাজা, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টোইনিস, অ্যালেক্স ক্যারি, নাথান কোল্টার নাইল, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও অ্যাডাম জাম্পা।